
সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুদ্ধারে তরী বাংলাদেশ ‘তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’ অভিযাত্রা শেষে ঢাকায় নদী সুরক্ষা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছে।
গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিআইডব্লিউটিএর নতুন টার্মিনাল ভবনে লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী এবং পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিআইডব্লিউটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এর আগে তরী বাংলাদেশ ‘নদী সুরক্ষায় একসাথে’ স্লোগানকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর আনন্দবাজার নৌঘাট থেকে এ যাত্রা শুরু করে।
সভার শুরুতে তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ ছিল। কিন্তু এখন বর্তমানে ৬ হাজার কিলোমিটার আছে। বাকি ১৮ হাজার কোথায় গেল? তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এই প্রশ্নটি রেখে দেশের দীর্ঘ নৌপথ পুনরুদ্ধার এবং নদীর দখল-দূষণ প্রতিরোধে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন
ডেঙ্গু প্রতিরোধক পণ্য
সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুদ্ধারে তরী বাংলাদেশ ‘তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’ অভিযাত্রা শেষে ঢাকায় নদী সুরক্ষা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছে।
মতবিনিময় সভায় লেখক ও সম্পাদক গাজী তানভীর আহমদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘একজন ঋণখেলাপি যদি নির্বাচনে অযোগ্য হয়, সেক্ষেত্রে নদী দখল-দূষণকারী কেন অযোগ্য হবে না? নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ ছিল নদী দখলকারী নির্বাচনে যোগ্য বিবেচিত হবে না। এটা কার্যকর করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এ অর্থে নদীর দখল-দূষণকে প্রাণ হত্যার মানদন্ডে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সমাজে এমন বোধ তৈরি করতে পারলে নদী দখল-দূষণ অনেকাংশেই কমে যাবে। নদীর ব্যাপকভাবে দখল করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি আর ছত্রছায়ায়। এটা রোধ করা জরুরি। সেই সঙ্গে তিনি তিতাসে নৌ যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সারাদেশে নৌপথের সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন।’
অনুষ্ঠানে সম্পাদক ও বহুমাত্রিক লেখক মোস্তাফিজ শফি বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে দেশের সকল অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আজকে আমাদের নদীগুলো ভালো নেই। নদী দখল-দূষণকারীরা যেন ক্ষমতার মসনদে বসতে না পারে সেজন্য আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
নদীভিত্তিক সংগঠন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘নদী ভালো থাকলে নদীকে আমরা বহুমাত্রিক ব্যবহারে নিতে পারি… এটা তরী বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে। এজন্য নদীকে কিভাবে ভালো রাখা যায় সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।অতীতে দেশের স্বীকৃত নৌপথ ২৪ হাজার কিলোমিটার বলা হলেও এর বাইরে সারা দেশে আরো অনেক নৌপথ রয়েছে যা হিসেবে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ এই নৌপথ উদ্ধার ও সচল করার জন্য আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে। আজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এই আন্দোলন। আমি আশা করবো ৬৪ জেলা থেকেই তরী বাংলাদেশের মতো নৌপথ সচলের দাবি নিয়ে ঢাকায় আসুন এবং ঢাকায় আসার মাধ্যমেই পূর্ণতা পাবে এই আন্দোলন।'
সেন্টার ফর ল' অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যারা নদীকে দখল ও দূষণ করছেন, তারা সরাসরি অপরাধ সংঘটিত করছেন। এমন ব্যক্তিদের নাম ও ছবি জনসম্মুখে টাঙিয়ে রাখতে হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী থেকে ঢাকার বুড়িগঙ্গায় নৌপথে আসার যে সাহস তরী বাংলাদেশ দেখিয়েছে তা আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য। রাষ্ট্র এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রাকে আইকনিক উদাহরণ হিসেবে নিয়ে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহনে মনোযোগ দিতে পারে।’
নদীভিত্তিক সংগঠন ‘আমরা দুর্বার'-এর সভাপতি এ সালাম সময় বলেন, ‘তরী বাংলাদেশ আজকে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে নৌপথে কিভাবে তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা আসা যায়। তাই যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক জিএম রুস্তম খান বলেন, ‘নদী হারানো মানে দেশ হারানো, নদী হারানো মানে কৃষক হারানো। নদী হারালে আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে। নদী হল বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধের স্মারক।’
বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস বলেন, ‘নদীর জায়গা উদ্ধারের পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণেও আমাদেরকে মনোযোগ দিতে হবে।’
বক্তারা জানান ‘নদীকে নিরাপদ রাখতে হলে সবার আগে আমাদেরকে ভূমিদস্য ও বালুদস্যুদের প্রতিহত করতে হবে। তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’
তরী বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশের নদী, খাল, পুকুর এবং জলাশয় দখল-দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। তারা ‘তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’ নৌপথ অভিযাত্রার মাধ্যমে সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নদী ও খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর সাথে খালের সংযোগ নিশ্চিতকরণ, পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের নৌপথের গুরুত্ব বাড়ানো, নো-নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি দাবি জানায়।
এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নদীকর্মীগণ এবং উপস্থিত অতিথিরা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা পাবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মত বিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খালেদা মুন্নি, সোহেল রানা ভূঁইয়া, সুশান্ত পাল, খাইরুজ্জামান ইমরান, জুবাইদুর রহমান মেহেদি, রফিকুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া, নদী ও পরিবেশ কর্মী এফ এইচ সবুজ প্রমূখ এবং নদী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের কর্ম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ মাহবুব উদ্দিন
মিরপুর , ঢাকা - ১২১৬
Contact us: edit@timelinenews24.com
Office: ০১৮৪০৩১৫৫৫৫
Copyright © 2025 Timeline News24. All rights reserved.