
আবু সালেহ মোঃ হামিদুল্লাহ :
তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বেড়েছে লোডশেডিং। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ৯৫ হাজার গ্রাহকের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,লাগামহীন লোডশেডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। উপজেলার প্রায় সব এলাকায়ই দিনে ও রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
তাছাড়া প্রতি মাসেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। ফলে এই উপজেলার গ্রাহকরা অস্বস্তিতে রয়েছে। অনেক গ্রাহক মন্তব্য করেছেন, ২৪ ঘন্টায় ৪/৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ দিলেও বিলের ক্ষেত্রে রয়েছে অপরিবর্তিত। এরআগে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ পেয়েও প্রতিমাসে যত টাকা বিল আসতো এখন বিদ্যুৎ না পেয়েও দ্বিগুণ বিল দিতে হচ্ছে! দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে?
উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের এক গরুর খামারি গোলাপ মিয়া জানান, ‘আমার একটি গরুর খামার রয়েছে। সেখানে বিদেশি জাতের অনেকগুলো গরু পালন করি। এই গরুর সার্বক্ষণিক ফার্মে বৈদ্যুতিক ফ্যান ব্যবহার করতে হয়। ১০ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকলেই গরুগুলো গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গরুপালনে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গরু খামারিরা। খামারিদের অভিযোগ প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
সেইসাথে প্রতি মাসে বিদ্যুতের বিল আসছে দ্বিগুণ টাকা। বিল নিয়ে অফিসে গেলে বলা হয় সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন আমার এরকম মতো বহু গ্রাহক রয়েছেন, তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত বিল দিচ্ছেন। আমরা আর কতবার বিল নিয়ে অফিসে যাব। বার বার অফিসে বলার পরও কোনো কাজে আসছে না। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। মাঝে মাঝে টানা ৩/৪ ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। দোকানে বসে কাজ করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে। অপরদিকে একজন ভুক্তভোগী বলেন, পল্লী বিদ্যুতের দায়সারা কারবার। আন্দাজি (ভূতুড়ে) বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে জীবন শেষ।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগের কবলে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীরা। অন্যদিকে সামনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আসছে কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে তারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছেনা।
অপরদিকে বিভিন্ন এলাকায় মুরগির খামারিদের মুরগি পালনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এক মুরগির খামারির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগি পালনের ক্ষেত্রে সবসময় ঠান্ডা পরিবেশের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে গরমের যে প্রাদুর্ভাব তার সাথে বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং। এই দুই কারণে খামারের মুরগিগুলো অসুস্থ হয়ে পরছে এবং প্রতিদিনই হিটস্ট্রোকে অসংখ্য মুরগি মারা যাচ্ছে। এসব কারণে আমাদের এবছর অনেক লোকসান গুনতে হবে।
এবিষয়ে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কটিয়াদী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল (ডিজিএম) ম্যানেজার মো. ওমর ফারুক বলেন, পল্লী বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এটা আমি স্বীকার করছি। এর মূল কারণ হচ্ছে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়া এবং চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কটিয়াদী উপজেলায় বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদা ২৫ মেগাওয়াট বিপরীতে গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৯৬ হাজার। সেই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৬ মেগাওয়াট। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ খুব কম পাচ্ছি। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বন্ধ পাওয়ার জেনারেশন চালু হলে লোডশেডিং কমবে। তার কাছে বিদ্যুতের এই সমস্যা কবে নাগাদ ভালো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা ভালো করে বলতে পারবেন। তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন খুব শ্রীঘ্রই এর উন্নতি ঘটবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ মাহবুব উদ্দিন
মিরপুর , ঢাকা - ১২১৬
Contact us: edit@timelinenews24.com
Office: ০১৮৪০৩১৫৫৫৫
Copyright © 2025 Timeline News24. All rights reserved.